
অনলাইন ডেস্কঃ
বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে এক নতুন সম্ভাবনার নাম এখন বিদেশি ফলের চাষ। আগে যেখানে কৃষকরা দেশীয় ফল আর মৌসুমি শস্যের ওপর নির্ভর করতেন, এখন তারা ঝুঁকছেন ড্রাগন, মাল্টা, রাম্বুটান, অ্যাভোকাডো, স্ট্রবেরি কিংবা সাম্মামের মতো উচ্চমূল্যের বিদেশি ফল উৎপাদনে। এতে একদিকে কৃষকের আয় বাড়ছে, অন্যদিকে দেশের পুষ্টি নিরাপত্তাও শক্তিশালী হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিদেশি ফলের উৎপাদন ছিল ১ লাখ ৪৬ হাজার ৯২২ টন। এক বছর পরেই তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ৬৮ হাজার ৫৭৭ টনে। অর্থাৎ এক বছরে প্রায় ২১ হাজার টন ফল বেশি উৎপাদিত হয়েছে। জমির পরিমাণও বেড়েছে প্রায় এক হাজার হেক্টরের মতো।
ডিএই উদ্যানতত্ত্ব শাখার উপ-পরিচালক নাদিরা খানম বলেন,
“এটি শুধু কৃষিকাজের পরিবর্তন নয়, বরং স্মার্ট খামারের দিকেও আমাদের অগ্রযাত্রা। দেশের আবহাওয়া বিদেশি অনেক ফল চাষের জন্য বেশ উপযোগী। আমরা কৃষকদের এগুলো চাষে উৎসাহিত করছি।”
নাটোরের সৌখিন কৃষক সেলিম রেজা ২০১২ সাল থেকে ড্রাগন ফল চাষ করে আসছেন। বর্তমানে তিনি ২৫ হেক্টর জমি নিয়ে ‘দৃষ্টান্ত অ্যাগ্রো ফার্ম অ্যান্ড নার্সারি’ পরিচালনা করেন। সেখানে অ্যাভোকাডো, রাম্বুটানসহ নানা বিদেশি ফল উৎপাদিত হয়। তার মতে,
“উন্নত জাত পাওয়া গেলে ড্রাগন ফলের বিঘা প্রতি আয় দাঁড়াতে পারে ২ থেকে ৫ লাখ টাকা।”
নরসিংদীর কৃষক আকরাম হোসেন রাম্বুটান চাষ করে এ বছরই প্রায় ১ লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছেন। তিনি আশা করছেন, আগামী বছর আড়াই লাখ টাকার বেশি আয় করতে পারবেন।
শুধু সমতল ভূমি নয়, পাহাড়ি জেলাগুলোতেও বিদেশি ফলের আবাদ দ্রুত বাড়ছে। খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে ড্রাগন ফল এবং মাল্টা উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২ সালে শুধু রাঙ্গামাটিতেই ১ হাজার ১৭৯ হেক্টর জমিতে ১০ হাজার টনের বেশি মাল্টা উৎপাদন হয়েছিল।
তবে কৃষকরা বলছেন, উৎপাদন বাড়লেও ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতে কার্যকর বিপণন ব্যবস্থার প্রয়োজন রয়েছে। নাটোরের কৃষক রবিউল করিম বলেন, “ফলন ভালো হচ্ছে, কিন্তু বাজারজাতকরণ ও ন্যায্য মূল্য না পেলে কৃষকের আয় প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়ে না।”
ডিএই উদ্যানতত্ত্ববিদ মইনুল হক মনে করেন, বিদেশি ফলের চাষে তরুণদের আগ্রহ বাড়ছে।
“অনেক উচ্চশিক্ষিত তরুণ আজ কৃষি খাতকে পেশা হিসেবে নিচ্ছেন। তাদের হাত ধরেই কৃষিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।”
বাংলাদেশে বর্তমানে বিদেশি ফলের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে কৃষি অর্থনীতির বড় অংশ বিদেশি ফল চাষ থেকেই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।
সূত্রঃ বাসস